হাওজা নিউজ এজেন্সি: খুতবায় তিনি উল্লেখ করেন, পবিত্র কুরআনের সূরা আল-কদর মানব ইতিহাসের অন্যতম রহস্যময় অধ্যায়, যেখানে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন সেই মহিমান্বিত রজনীর কথা, যা “হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।”
সূরা কদরের আয়াতসমূহ পাঠ
খতিব এসময় সূরা কদরের আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করেন:
إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ
وَمَا أَدْرَاكَ مَا لَيْلَةُ الْقَدْرِ
لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِّنْ أَلْفِ شَهْرٍ
تَنَزَّلُ الْمَلَائِكَةُ وَالرُّوحُ فِيهَا بِإِذْنِ رَبِّهِم مِّن كُلِّ أَمْرٍ
سَلَامٌ هِيَ حَتَّى مَطْلَعِ الْفَجْرِ
ইমাম সাদিক (আ.)-এর তাফসির উদ্ধৃত
তিনি বলেন, আহলে বাইতের (আ.) তাফসিরে সূরাটির গভীরে যে আধ্যাত্মিক পরিচয় নিহিত আছে, তা ইমাম জাফর সাদিক (আ.)-এর এই বাণীতে পরিষ্কারভাবে প্রতিফলিত:
“নিশ্চয়ই ফাতিমা (সা. আ.)-ই হলো লাইলাতুল কদর। যে ব্যক্তি ফাতিমা (সা. আ.)-কে তাঁর প্রকৃত মর্যাদায় চিনেছে, সে লাইলাতুল কদরকে চিনেছে।”
[তাফসিরে বুরহান, খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা ৬২১]
খতিব বলেন, এই হাদীস স্পষ্ট করে যে লাইলাতুল কদর কোনো কেবল সময়গত ঘটনা নয়, বরং তা এক গভীর আধ্যাত্মিক বাস্তবতার নাম, যার প্রতিচ্ছবি ফাতিমা যাহরা (সা. আ.)-এর সত্তায় প্রকাশ পেয়েছে।
আধ্যাত্মিক ও প্রতীকী ব্যাখ্যা
মাওলানা শরিফুল ইসলাম ব্যাখ্যা করেন, সূরা কদরের প্রতিটি আয়াত হযরত ফাতিমা (সা. আ.)-এর আধ্যাত্মিক মহিমার প্রতীক হিসেবে দেখা যেতে পারে। উদাহরণ হিসেবে তিনি কয়েকটি দিক তুলে ধরেন:
“إِنَّا أَنْزَلْনَاهُ فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ” —
যেমন কুরআন রহমতের মাধ্যমে অবতীর্ণ হয়েছে, তেমনি ফাতিমা (সা. আ.) নবী (সা.)-এর নূর ও বংশধারার ধারক।
“وَمَا أَدْرَاكَ مَا لَيْلَةُ الْقَدْرِ”
— লাইলাতুল কদরের রহস্য যেমন মানুষের উপলব্ধির বাইরে, তেমনি ফাতিমা (সা. আ.)-এর মর্যাদাও মানব জ্ঞানের অতীত।
“لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِّنْ أَلْفِ شَهْرٍ”
তাঁর ইবাদত ও ত্যাগ হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও শ্রেষ্ঠ।
“تَنَزَّلُ الْمَلَائِكَةُ وَالرُّوحُ فِيهَا”
— ফেরেশতারা যেমন লাইলাতুল কদরে অবতীর্ণ হয়, ঠিক তেমনি তাঁর ঘর ছিল নূর ও রহমতের কেন্দ্র।
“سَلَامٌ هِيَ حَتَّى مَطْلَعِ الْفَجْرِ”
— ফাতিমা (সা. আ.)-ই শান্তি, পবিত্রতা ও আলোর পূর্ণ প্রতীক।
ইমাম বাকির (আ.)-এর হাদীস উপস্থাপন
তিনি আরও বলেন, “তাঁর নাম ‘ফাতিমা’ রাখা হয়েছে, কারণ মানুষ তাঁর প্রকৃত জ্ঞান থেকে বিরত রাখা হয়েছে।”
[মা‘য়ানি আল-আখবার — শাইখ আস-সাদূক]
তার বক্তব্যে পরিষ্কার হয় যে হযরত ফাতিমা যাহরা (সা. আ.)-এর ব্যক্তিত্ব লাইলাতুল কদরের মতোই রহস্যময় এবং গভীর।
খতিব খুতবার উপসংহারে বলেন, “সূরা কদর শুধু এক রাতের ফজিলত নয়, এটি এক আধ্যাত্মিক প্রতীক। হযরত ফাতিমা যাহরা (সা. আ.)-এর পবিত্র সত্তা সেই প্রতীকের সর্বোচ্চ প্রতিফলন। যে ব্যক্তি তাঁকে চেনে এবং তাঁর পথ অনুসরণ করে, সে লাইলাতুল কদরের রহস্য অন্তর দিয়ে উপলব্ধি করতে পারে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির নিকট পৌঁছে যায়।”
সূত্রসমূহ:
১. তাফসির আল-বুরহান — সাইয়্যিদ হাশিম আল-বাহরানি, খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা ৬২১
২. তাফসির নূরুস সাকালাইন — আবদুল আলী আল-হুযাইজি, খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা ৬৩৭
৩. তাফসির আল-কুম্মি — আলী ইবনে ইব্রাহিম আল-কুম্মি
৪. মা‘য়ানি আল-আখবার — শাইখ আস-সাদূক
৫. বিহারুল আনওয়ার — আল্লামা আল-মাজলিসি
আপনার কমেন্ট